শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামীলীগের দখলে থাকা শিল্প ও পোশাক কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বালুমহাল, খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একের পর এক দখলের অভিযোগ উঠেছে এস এম মামুন মিয়া ও বিএনপি নামধারী তারই অনুসারীদের বিরুদ্ধে। বৈধ-অবৈধ ব্যবসা ও চাঁদার টাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে সমঝোতার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে এরইমধ্যে। মামুন মিয়া সরকার পতনের পর প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক চোরাকারবারির কাছ থেকে খামে করে নজরানা নিয়েছে বলেও গোপন সুত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্র থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দিলেও তাতে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এমনকি মামুন মিয়াকে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গাড়িকান্ডে কর্ণফুলী উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক সহ সব স্তরের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলেও গা ঢাকা দেয়া আওয়ামী নেতাদের সাথে লিয়াজোঁ করে বৈধ-অবৈধ ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির হাতবদল করেছে এই মামুন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে কর্ণফুলী উপজেলার শিল্প ও তৈরি পোশাক কারখানার ওয়েস্টেজ পণ্য, ঝুট ব্যবসা, খেয়াঘাট, বালু মহাল ও চোরাই তেলের ব্যবসাসহ বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সোলায়মান তালুকদার, জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান ও তেল শুক্কুর সহ ফ্যাসিবাদী দলের নেতারা। এ সেক্টরগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ রেখে কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করতেন। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে গেলে মামুন মিয়া তার সহচর নামধারী কর্ণফুলীর বিএনপি নেতা আবদুল গফুর প্রকাশ গফুর মেম্বার, যুবদল নেতা আবু তৈয়বসহ অঙ্গসংগঠনের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। জানা যায়, মামুন মিয়াকে ম্যানেজ করে চলছে ফ্যাসিবাদী দালাল-দোসর চোরাকারবারি কর্ণফুলীর তেল শুক্কুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আজিজুর রহমান। আজিজুর রহমান আবার মামুন মিয়ার অর্থ যোগানদাতাও বটে। আপন মামা শশুর হওয়ায় চট্টগ্রাম দক্ষিণের ফ্যাসিবাদী নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুকের ব্যবসা বাণিজ্যও তার নিয়ন্ত্রণে।
বর্তমানে কর্ণফুলী ১১নং জুলধা ঘাট, ৯নং ডাঙারচর ঘাট, লংচং টেক্সটাইল, স্পোর্টস ফুটওয়্যার, ফোর এইচ গ্রুপের ব্যালামী টেক্সটাইল, এস আলম সুগার মিল, সেভেন রিং সিমেন্ট, এস আলম সয়াবিন তেল, ওয়্যার হাউজ, চেমন আরা ইস্পাত, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেডে নাশতা সরবরাহ, শিকলবাহা পোড়া তেলের চোরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যে মামুন মিয়া ও তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির হাতবদল হয় বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
কর্ণফুলীর খেয়াঘাট গুলোর খাস কালেকশন আগে আওয়ামী লীগের লোকজন সংগ্রহ করতো। সরকার পতনের পর তাদের হয়ে মামুন মিয়ার লোকজন জুলধা ও ডাঙারচর ঘাট দখলে নিয়ে নেয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এ দুটি ঘাট দিয়ে টাকার বস্তা ভেসে আসে স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, অবৈধ তেল থেকে শুরু করে গ্যাসের সিলিন্ডার, সিগারেট, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান পাচার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে এই ঘাটগুলো দিয়ে। এই ঘাট দিয়ে তেল শুক্কুরের অবৈধ ব্যবসা বহাল তবিয়তে এখনো রয়েছে।
তাছাড়া শিকলবাহা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পোড়া তেলের চোরা ব্যবসা, শিল্প ও পোশাক কারখানার ওয়েস্টেজ পণ্য, সরবরাহ ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ মামুন মিয়া ও তার অনুসারীদের। হাতবদল ও ভাগাভাগি ব্যবসার অর্থ প্রশাসন ও বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্মীয় স্বজনের পকেটেও যায়। তবে তার মন্তব্য হচ্ছে একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি থেকে সে একা বহিষ্কার হয়নি। ৬৫ জন সদস্যও বাদ হয়েছে। সুতরাং, ভবিষ্যতে তার জন্য ভালো কিছু আশা করছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপি থেকে বলা হয়, এস এম মামুন মিয়া ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রী মহল ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এর সাথে কিছু লোকাল চাঁদাবাজও জড়িত। চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের কর্ণফুলীর বিএনপিতে স্থান নেই।
স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা জানান, কর্ণফুলী উপজেলার মামুন মিয়া আওয়ামী লীগের আমলে লিয়াজোঁ করে চলতো। সে একজন লেবাসধারী বিএনপি নেতা। এ এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা এতো মামলা-হামলার শিকার হলেও সে কিন্তু একদিনের জন্যও জেল হাজতে যায়নি। ব্যবসার খাতিরে সে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পর্যন্ত জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তার হাতে যদি কর্ণফুলীতে বিএনপির দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে ফ্যাসিবাদীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে। তাকেতো সবাই ভুয়া মেজর হিসেবে চেনেন। আওয়ামী নেতাদের সাথে ফিশিং বোট ব্যবসার আড়ালে তার চোরাকারবার রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের সাবেক পিবিআই প্রধান বনজ কুমারের সাথে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব থাকার সুবাদে তাকে মামলা-হামলা করে হয়রানি করতে পারেনি। সরকার পতনের পর সৌভাগ্য নেমে আসলেও লোভ সামলাতে না পেরে এস আলম বিলাসবহুল গাড়িকান্ডে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দাগ লেগে যায়। – তারা যোগ করেন।